বড় শোবার ঘর। ডান দিকে একটা খাট একটু কোণাকোণি করে রাখা। মশারী ওঠান। বামে মাঝারি রকমের টেবিল, তাতে শেড দেয়া ল্যাম্প, পাশে টেলিফোন। দু-একটা অতিরিক্ত বসবার জায়গা। একদিকে গোসলখানার দরজা, অন্য পাশে গরাদহীন কাঁচের বড় জানালা. পর্দা ওঠার সংগে সংগে শোনা যাবে, দূরে বহু কণ্ঠের মিলিত ধ্বনি বন্দেমাতরম। এবং একটু কাছে প্রচন্ড আল্লাহু আকবর রব! এই দুই চিৎকারের সংগে সামঞ্জস্য রেখে মাঝে মাঝে দেখা দেবে, বন্ধ জানালার কাঁচের মধ্যদিয়ে, দূরে, লকলকে আগুনের শিখা, নীল আকাশকে রক্তিমাভ করে কাঁপছে। ঘরের মধ্যে চারজন লোক ও একজন অসুস্থ শিশু। খাটের ওপর বর্ষীয়সী আম্মাজান আধশোয়া অবস্থায় শিশুকে আস্তে আস্তে বাতাস করছেন। আবছা আলোতে আম্মাজানের ক্লান্ত উদ্বিগ্ন মুখ এক অদ্ভুত বিষাদভরা গাম্ভীর্যে স্তব্ধ। শিশুর অন্য পাশে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে কিশোরী জুলেখা। মাথায় ওড়নার এক অংশ ঝুলে মাটিতে পড়ে গেছে, লক্ষ্য নেই। ঘামে কপালের গুঁড়ো চুল গালে গলায় লেপটে আছে। অসহনীয় আতংকে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে ভয়ার্ত অর্থহীন চাহনি। টেবিলের সামনে খাটের দিক পেছন ফিরে, কোমরের পেছনে দু’হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে আছেন আব্বাজান। নিশ্চল নীরব। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন টেবিলের ল্যাম্পের সহস্র আলোকরশ্মির কেন্দ্রস্থলে। যেন ভেতরের কোনো অশান্তি বিক্ষুদ্ধ হিংস্র অন্তর্দ্বন্দ্বকে নিষ্পেষিত করে তবে তিনি সুস্থরূপে ধারণ করবেন। টেবিল ল্যাম্পের সংকীর্ণ। আলোপরিসীমার মধ্যে ফাঁপানো সাদা দাঁড়ী আর কপালের গভীর রেখা জ্বলজ্বল করছে। দ্বিতীয় ছেলে ফরিদ নিশাচর কোনো পশুর মতো সন্তর্পণে সামনে পায়চারী করছে। থমকে দাঁড়াচ্ছে। চোখেমুখে প্রতিহিংসার ছায়াবাজি।