প্রাথমিক অংশ

রিশান পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে নিচে তাকাল, যতদূর চোখ যায় ততদূর বিস্তৃত এক বিশাল অরণ্য, সবুজ দেবদারু গাছ ঝোঁপঝাড় লতাগুল্ম জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে। উপর থেকে এই বিশাল অরণ্যরাজিকে মনে হচ্ছে একটি সবুজ কার্পেট, কেউ যেন নিচে গভীর উপত্যকায় খুব যত্ন করে বিছিয়ে রেখেছে। দূরে পর্বতমালার সারি, প্রথমে গাঢ় নীল, তার পিছনে হালকা নীল, আরো দূরে ধূসর রং হয়ে দিগন্তে মিশে গেছে। কাছাকাছি উঁচু একটা পাহাড়ের চূড়ায় সাদা খানিকটা মেঘ আটকা পড়ে আছে, এ ছাড়া আকাশে কোথাও কোনো মেঘের চিহ্ন নেই, স্বচ্ছ নীল রঙের আকাশ যেন পৃথিবীকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছে। পাহাড়ের পাদদেশে যে বুনো নদীটি পাথর থেকে পাথরে ভয়ঙ্কর গর্জন করে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল, এই চুড়ো থেকে সেই নদীটিকেই মনে হচ্ছে একটি শান্ত স্রোতধারা। চারদিকে এক ধরনের আশ্চর্য নীরবতা, কান পাতলে গাছের পাতার মৃদু শব্দ, ঝরনার ক্ষীণ গুঞ্জন বা বন্য পাখির অস্পষ্ট কলরব শোনা যায়। কিন্তু সেসব পাহাড়ের চূড়ায় এই আশ্চর্য নীরবতাকে স্পর্শ করে না। রিশান প্রকৃতির প্রায় এই নির্লজ্জ সৌন্দর্যের দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। সে গ্রহ থেকে গ্রহে, উপগ্রহ থেকে উপগ্রহে ঘুরে বেড়িয়েছে, মহাকাশের গভীরে হানা দিয়েছে, সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে পার হয়ে গেছে; কিন্তু নিজের পৃথিবীর এই বিস্ময়কর সৌন্দর্যের দিকে কখনো চোখ মেলে তাকায় নি। মাটির পৃথিবীতে যে এত রহস্য লুকিয়ে আছে কে জানত?