প্রাথমিক অংশ

রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে পাঁচজনের সামনে কিছু বলতে গেলে আমি দিশেহারা হয়ে যাই। সমস্যা তখন : কোনটা ছাড়ি, কোনটা বলি? প্রবাদে কয়, বাঁশবনে ডোম কানা। যে বাঁশটা দেখে, আহাম্মুখ ডোম সেইটেই কাটতে চায়। আখেরে আকছারই যা হয়, তাই ঘটে। একটা নিরেস বাঁশ কেটে বাড়ি ফেরে! রবীন্দ্রনাথের বেলা তবু খানিকটে বাঁচাও আছে, যে বাঁশই পেশ করিনে কেন, কেউ না কেউ সেটা পড়েছেন। তিনি বুড়া রাজা প্রতাপ রায়ের মতো আহাহা বাহাবাহা রবে সাধু! সাধু! রব ছাড়বেন। মাইকেল শ্রীমধুসূদনকে নিয়ে সংকট উত্তটতর। আজ কেন, পঞ্চাশ বৎসর পূর্বেই মাইকেল-কাব্য-নাট্য-পত্রাবলি বাবদে ওয়াকিফহাল ছিলেন অঙ্কুজনই, যারা মাইকেল নির্মিত মধুচক্র থেকে গৌড়জন যারা আনন্দে করিবে পান সুধা নিরবধি রসাস্বাদ করতেন। পঞ্চাশ বছর পূর্বে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে বাঙলা ক্লাস নেবার সময় কেউ যদি বলাকার কোনও অপেক্ষাকৃত বিরল শব্দের অর্থ বলতে না পারত তিনি তখন হরহামেশা শাসাতেন, দাঁড়া! তোদের তা হলে “মেঘনাদ” পড়াব, তখন বুঝবি কঠিন শব্দ কাকে বলে? আমরা আতঙ্কে কুঁকড়ি সুকড়ি মেরে যেতুম।… আর আজ!! তবে একটি আশার বাণী আছে। বছর তিরিশেক পূর্বে মডার্ন কবিরা যখন বাঙলা শব্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আরম্ভ করলেন তখন একাধিক জন সবিস্ময়ে লক্ষ করলেন যে অনাদৃত শ্রীমধু শতাধিক বৎসর পূর্বে ওই কর্মটি করেছিলেন তাঁর সর্বপ্রতিভা নিয়োগ করে অসীম উৎসাহে। এবং বিশেষ করে শ্রীমধু উল্লাসবোধ করতেন, আলঙ্কারিক অর্থাৎ যারা কাব্যরস কী, সে রসের উত্তম-অধম বিচার, উত্তম রসসৃষ্টির সময় কোন কোন বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি এদের সেসব আইন লঙ্ঘন করতে পারলে।