সে চলিতেছিল দুর্গম কাঁটা-ভরা পথ দিয়ে। পথ চলিতে চলিতে সে একবার পিছন ফিরিয়া দেখিল, লক্ষ আঁখি অনিমিষে তাহার দিকে চাহিয়া আছে। সে-দৃষ্টিতে আশা-উন্মাদনার ভাস্বর জ্যোতি ঠিকরাইয়া পড়িতেছিল। তাহাই দুরন্ত পথিকের বক্ষ এক মাদকতা-ভরা গৌরবে ভরপুর করিয়া দিল। সে প্রাণ-ভরা তৃপ্তির হাসি হাসিয়া বলিল, ‘হাঁ ভাই! তোমাদের এমন শক্তি-ভরা দৃষ্টি পেলে কোথায়?’ অযুত আঁখির অযুত দীপ্ত চাউনি বলিয়া উঠিল, – ‘ওগো সাহসী পথিক, এ দৃষ্টি পেয়েছি তোমারই চলার পথ চেয়ে!’ উহারই মধ্যে কাহারও স্নেহ-করুণ চাউনি বাণীতে ফুটিয়ে উঠিল, – ‘হায়! এ দুর্গম পথে তরুণ পথিকের মৃত্যু যে অনিবার্য’ অমনি লক্ষ কণ্ঠের আর্ত ঝংকার গর্জন করিয়া উঠিল, ‘চোপরাও ভীরু! এই তো মানবাত্মার সত্য শাশ্বত পথ!’ পথিক দু-চোখ পুরিয়া এই কল্যাণ-দৃষ্টির শক্তি হরণ করিয়া লইল। তাহার সুপ্ত যত কিছু অন্তরের সত্য, এক অঙ্গুলি-পরশে সাধা বীণার ঝঞ্ঝনার মতো সাগ্রহে সাড়া দিয়ে উঠিল, – ‘আগে চল।’ বনের সবুজ তাহার অবুঝ তারুণ্য দিয়া পথিকের প্রাণ ভরিয়া দিয়া বলিল – ‘এই তোমায় যৌবনের রাজটিকা পরিয়ে দিলাম; তুমি চির-যৌবন, চির অমর হলে।’ দূরের আকাশ আনত হইয়া তাহার শিরশ্চুম্বন করিয়া গেল। দূরের দিগ্বলয় তাহাকে মুক্তির সীমারেখার আবছায়া দেখাইতে লাগিল। দুই পাশে তাহার বনের শাখী শাখার পতাকা দুলাইয়া তাহাকে অভিনন্দন করিতে লাগিল।