অনেক ভেবে-চিন্তে চারজন শেষ পর্যন্ত বদ্রীবাবুর ‘দি গ্ৰেট ইন্ডিয়ান প্রিন্টিং হাউস’-এ ঢুকে পড়লুম। নাম যতই জাঁদরেল হোক, প্রেসের ভেতরটায় কেমন আবছা অন্ধকার। এই দিনের বেলাতেও রামছাগলের ঘোলাটে চোখের মতন কয়েকটা হলদে হলদে ইলেকট্রিকের বালব্ জ্বলছিল এদিকে-ওদিকে; পুরনো কতকগুলো টাইপ-কেসের সামনে ঝুঁকে পড়ে ঘষা কাচের মতো চশমা পরা একজন বুড়ো কম্পোজিটার চিমটে দিয়ে অক্ষর খুঁটে খুঁটে ‘গ্যালি’ সাজাচ্ছিল; ওধারে একজন ঘটাং ঘটাং করে প্রেসে কী ছেপে যাচ্ছিল, উড়ে পড়ছিল নতুন ছাপা-হওয়া কাগজ-আর একজন তা গুছিয়ে রাখছিল। পুরনো নোনাধরা দেওয়াল, কুলুঙ্গিতে সিদ্ধিদাতা গণেশ রয়েছেন, তাঁর পায়ের কাছে বসে একজোড়া আরশোলা বোধহয় ছাপার কাজই তদারক করছিল, হাত কয়েক দূরে পেটমোটা একটা টিকটিকি জ্বলন্ত চোখে লক্ষ করছিল তাদের। ঘরময় কালির গন্ধ, কাগজের গন্ধ, নোনার গন্ধ, আর তারই ভেতরে টেবিল-চেয়ার পেতে, খাতা-কাগজপত্র, কালি-কলম, টেলিফোন এই সব নিয়ে বদ্রীবাবু একমনে মস্ত একটা অ্যালুমিনিয়ামের বাটি থেকে তেলমাখা মুড়ি আর কাঁচালঙ্কা খাচ্ছিলেন।