যা কিছু সুন্দর ও স্মরণীয় ও স্বপ্নের মতো, তার সবই আমি দেখেছি ছেলেবেলায়, যখন আমি মেঘ-মাছ-পাখি-ঘেরা গ্রামে ছিলাম। তারপর যেই শহরে এলাম, চারপাশে দেখতে শুরু করলাম ছাইপাশ; তিন দশক ধ’রে যা দেখে দেখে চোখ দুটি একেবারে প’চে গেছে। এখন আর কিছুই দেখতে ইচ্ছে করে না। তাকালেই দেখি শয়তান ও ভাঁড়ের মুখ। আমার চোখ বোঝাই হয়ে গেছে আবর্জনায়; কেতুরের মতো দু-চোখ ভ’রে জ’মে উঠছে নগর, নেতা ও অভিনেত্রী। এসবে একেবারে অন্ধই হয়ে যেতাম, যদি না চোখে অদৃশ্য আঁখিতারার মতো জ্বলতো ছেলেবেলায় দেখা একরাশ অমর দৃশ্য : পাখি, নদী, মাছ, ধানের গুচ্ছ, মেঘ, কুমড়ো ফুল, গাভী, ঘাস, ঢেউ…। এসব এখন আর আমি দেখি না; কিন্তু চোখ বুজলেই দেখতে পাই পাখি উড়ছে, নদী বইছে, কুমড়ো ফুল হলদে হয়ে উঠছে নতুন বউর করতলের মতো। পাখিদের বেশ মনে পড়ে; কিন্তু আমার জগতে কোনো বিখ্যাত পাখি নেই। আমার পাখিরা আমার ছেলেবেলার মতোই অখ্যাত ও অন্তরঙ্গ; কিন্তু কী যে মনোরম! ওই সব পাখিদের আমি অনেক বছর দেখি না, কিন্তু দেখতে খুবই ইচ্ছে হয়, তাই চোখ বুজে অতীত দেখার একটি অভ্যাস হয়ে গেছে আমার। যখন আমার চারপাশের বাস্তবকে দেখতে ঘেন্না লাগে, লাগে মাঝেমাঝেই, তখনি আমি চোখ বুজি, এবং রহস্যের মতো দেখতে পাই ছেলেবেলার স্বর্গের টুকরোগুলো।