Cover image of প্রদোষে প্রাকৃতজন

প্রদোষে প্রাকৃতজন

শওকত আলী
উপন্যাস

প্রাথমিক অংশ

চৈত্রের দাবদাহে অশ্বত্থছায়া বড়ই শ্রান্তিহারক। নতুবা এতো শীঘ ক্লান্তি অপনোদন সম্ভব ছিলো না। দণ্ড দুই আগেও তার দৃষ্টি ছিলো অস্বচ্ছ। দৃশ্যবস্তু বিচিত্র বিভঙ্গে দোলায়িত হচ্ছিলো। কঠিন পথ বারেক মনে হচ্ছিলো সম্মুখে ঢেউয়ের মতো উপরে উঠছে, আবার মনে হচ্ছিলো, ক্রমেই নেমে যাচ্ছে অতলে। পদক্ষেপও তখন স্ববশে ছিলো না। প্রমত্ত মাদকসেবীর মতোই সে টলে টলে যাচ্ছিলো। কখনও বামে, কখনও দক্ষিণে। সে বড় বিচিত্র অবস্থা। এখন স্মরণ হলে কৌতুক বোধ হয়। অবশ্য তখনও তার কৌতুক বোধ হচ্ছিলো। কৌতুক বোধ হবারই কথা। কারণ প্রথমে তুমি দেখলে বংশবীথিকার বিনত শাখায় একটি বনকপোত। পরক্ষণে সেই ক্ষুদ্রাকার পাখিটি হয়ে গেলো একটি উর্ধলক্ষী মর্কট–মুহূর্তেক পরে সেই মর্কটও আর থাকলো না, নিমিষে হয়ে গেলো একটি বিশুষ্ক বৃক্ষশাখা। চক্ষু কচালিত করলে অতঃপর তুমি আর কিছুই দেখলে না। বংশবীথিকা না, বনকপোত না, মর্কট না–বিশুষ্ক শাখাও না। কী অদ্ভুত কাণ্ড আসলে কিছুই নেই সম্মুখে। শুধুই ক্রোশ ক্রোশ ব্যাপ্ত কুশক্ষেত্র। গ্রাম নেই দিগন্ত রেখায়, বৃক্ষরাজি গোচরে আসে না, প্রান্তরের বিস্তৃতি কেবলই দূর থেকে দূরে প্রসারিত হয়ে যাচ্ছে, আকাশসীমা ধূসরতায় বিলীন।