প্রাচীন হিন্দু যুগে সমগ্র বাংলা দেশের কোন একটি বিশিষ্ট নাম ছিল না। ইহার ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। উত্তরবঙ্গে পূণ্ড্র ও বরেন্দ্র (অথবা বরেন্দ্রী), পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় ও তাম্রলিপ্তি এবং দক্ষিণ ও পূর্ববঙ্গে বঙ্গ, সমতট, হরিকেল ও বঙ্গাল প্রভৃতি দেশ ছিল। এতদ্ভিন্ন উত্তর ও পশ্চিমবঙ্গের কতকাংশ গৌড় নামে সুপরিচিত ছিল। এই সমুদয় দেশের সীমা ও বিস্তৃতি সঠিক নির্ণয় করা যায় না, কারণ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তাহার বৃদ্ধি ও হ্রাস হইয়াছে। মুসলমান যুগেই সর্বপ্রথম এই সমুদয় দেশে একত্রে বাংলা অথবা বাঙ্গালা এই নামে পরিচিত হয়। এই বাংলা হইতেই ইউরোপীয়গণের ‘বেঙ্গলা’ (Bengala) ও ‘বেঙ্গল’ (Bengal) নামে উৎপত্তি। মুঘল সাম্রাজ্যের যুগে ‘বাঙ্গালা’ চট্টগ্রাম হইতে গর্হি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আইন-ই-আকবরী প্রণেতা আবুল ফজল বলেন, “এই দেশের প্রাচীন নাম ছিল বঙ্গ। প্রাচীন কালে ইহার রাজারা ১০ গজ উচ্চ ও ২০ গজ বিস্তৃত প্রাকণ্ড ‘আল’ নির্মাণ করিতেন; কালে ইহা হইতেই ‘বাঙ্গাল’ এবং ‘বাঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি।” এই অনুমান সত্য নহে। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দী এবং সম্ভবত আরও প্রাচীন কাল হইতেই বঙ্গ ও বঙ্গাল দুইটি দেশ ছিল এবং অনেকগুলি শিলালিপিতে এই দুইটি দেশের একত্র উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। সুতরাং বঙ্গ দেশের নাম হইতে ‘আল’ যোগে অথবা অন্য কোন কারণে বঙ্গাল অথবা বাংলা নামের উদ্ভব হইয়াছে, ইহা স্বীকার করা যায় না।