সারারাত যেন ঘুম আসে না আনুর। ট্রেন কখন মহিমপুর পৌঁছুবে সেই ভাবনা তার। হুট করে স্টেশন আসে, ঘুরঘুটি অন্ধকারের মধ্যে প্ল্যাটফরমে ভূতের মতো মানুষগুলোকে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। একটা টেমি হাতে কে ডাকতে ডাকতে চলে যায়– চাচা, চাচাগো, কোথা থেকে যেন খট খট ঘটাং ঘটাং শব্দ উঠতে থাকে, আনু জিগ্যেস করে–হ্যাঁ বাবা এসে গেছি আমরা? আরে না। তোর ঘুম নেই লক্ষ্মীছাড়া। ঘুমো। কিন্তু আনু ভয় পায় না। বাবা অমন ধমক দিলেও সে শুয়ে পড়ে না। জানে বাবা ঐ রকমই, তাকে কিস্সু বলবেন না। সান্তাহারে তিনঘণ্টা বসে থাকবার পর যখন গাড়ি এলো, বাবা বলেছিলেন, এইবার আমরা এসে গেছি। সেই কথাটা শুনে অবধি আনুর ঘুম গেছে। নইলে তার আগে চমৎকার ঘুমোচ্ছিল সে মার পাশে ওয়েটিং রুমের বেঞ্চিতে। শোবার আগে বাবা মিষ্টি কিনে এনেছিলেন এক হাঁড়ি। দুটোর বেশি খেতে পারে নি। ট্রেনে কিস্সু খেতে পারে না আনু। বাবার সঙ্গে কত জায়গায় ঘুরেছে সে। বাবার শুধু বদলির চাকরি। বদলিটা খুব পছন্দ আনুর, কেবল চাকরিটা একেবারেই ভালো লাগে না। কত ছেলের বাবা ডাক্তার, উকিল, সার্কল অফিসার, কত কী!–আর কেবল তার বাবাই কোথা থেকে বেছে বেছে দারোগা হয়েছেন। ছেলেরা ঠাট্টা করে; বলে–দারোগার ব্যাটা, পালা পালা, ধরে হাজতে নিয়ে যাবে। আনুব তখন জেদ হয় খুব। একেকবার ছেলেগুলোকে ধাওয়া করে; যেন সত্যি সত্যি ধরবে। কিন্তু একি; সবাই ভয় পাওয়া দূরে থাক, একটু দৌড়ে গিয়েই খিলখিল করে হাসতে থাকে। তখন আনু বুঝতে পারে, তার কোনো জোর নেই, কিছু নেই। সে একা। একেকদিন বাড়িতে এসে ধুপধাপ করে এটা ফেলে, ওটা সরায়, পরে মার কাছে গিয়ে বলে মা, তুমি বাবাকে আর থানায় যেতে দিও না। কেন রে?