বছরের এ সময়ে বৃষ্টি হয় কেউ কখনো শোনেনি। এ হচ্ছে এমন একটা সময়, যখন আকাশটা প্রজাপতির পাখার মতো ফিনফিন করতে থাকে রোদ্দুরে, নীল রঙে; যখন উত্তর থেকে নতুন প্রেমের মতো গা–শির–শির–করা মিষ্টি বাতাস বয় কী বয় না তা বোঝাও যায় না; যখন লোকেরা খুব স্ফুর্তির মেজাজে থাকে আর বলাবলি করে সংসারে বেঁচে থাকাটা কিছু মন্দ নয়; আর ছেলেমেয়েরা কাঁচের জিনিসপত্তর ভাঙলেও যখন মায়েরা কিছু বলে না; যখন হাট বসতে থাকে বিকেলের অনেক আগে থেকেই আর ভাঙতে ভাঙতে অনেক রাত্তির হয়ে যায়, কারণ বছরের এ রকম সময়ে অনেক রাত্তিরেও মানুষ একা হয়ে যায় না, ভয়। করে না, নদীর খেয়া বন্ধ হয় না। এ রকম দিনে বৃষ্টি হয় বলে কেউ কখনো শোনেনি। কিন্তু আজ কোথা থেকে একখণ্ড কালো মেঘ এসে জমেছিল, ট্রেজারির পেটা ঘড়িতে চারটে বাজবার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল বাতাস দিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের। রাস্তার ওপর সবে আধখানা হাট বসেছিল, সবে গিন্নীরা পয়সা বার করে দিচ্ছিল কর্তাদের হাতে, সবে তেলেভাজাওলা তার উনুন জ্বালিয়েছিল, এমন সময় বৃষ্টি। সে বৃষ্টিতে দুহাত দূরেও কিছু আর দেখা গেল না। কেউ আর বাইরে রইল না। ডাকাত পড়ার মতো একটা শোরগোল পড়ে গেল; যে যেমন পারল রাস্তার দুপাশে জুতো কাপড় ট্রাঙ্কের দোকানের বারান্দায় ভিজতে ভিজতে এসে দাঁড়াল। এমনকি মসজিদের ভেতরটাও লোকে আর তাদের কাপড় থেকে চুঁইয়ে পড়া পানিতে গমগম সপসপ করতে লাগল; মন খারাপ করে নিমিলিত নেত্রে বসে রইলেন ইমাম সাহেব; আলু পটল কুমড়োর বড় বড় ঝাঁকাগুলো পথের ওপরেই ভিজতে লাগল। একটা খেয়া এপারে এসেছিল বৃষ্টি মাথায় করে কিন্তু আর ফিরে যেতে পারল না। ক্যাশবাক্স গামছা দিয়ে ঢেকে ভিজতে লাগল ঘাটিয়াল। যাকে তাকে খামোকা গালাগাল দিতে লাগল সে। ওপারে ধু ধু পাড়ের ওপর কয়েকজন হাটুরে হতভম্ভ হয়ে কোথায় পালাবে বুঝতে না পেরে যে যেদিকে পারল দৌডুল।