বসন্ত প’ড়ে গিয়েছে না? দখিন হাওয়া এসে শীতকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। আকাশ এমন নীল যে, মনে হচ্ছে উড়ন্ত চিলগুলোর ডানায় নীল রং লেগে যাবে। এই সময় তার কথা আমার বড় মনে পড়ে। তার কথাই বলব। মেডিকেল কলেজ থেকে বার হয়ে প্রথম দিনকতক গবর্নমেণ্টের চাকরি নেবার বৃথা চেষ্টা করবার পর যে মাসে আমি একটা চা-বাগানের ডাক্তারী নিয়ে গৌহাটিতে চ’লে গেলুম, সেই মাসেই আমার ছোট বোন শৈল শ্বশুরবাড়ীতে কলেরা হয়ে মারা গেল। এই শৈলকে আমি বড় ভালোবাসতুম, আমার অন্যান্য বোনেদের সঙ্গে ছেলেবেলায় অনেক মারামারি করেছি, কিন্তু শৈলর গায়ে আমি কোনদিন হাত তুলিনি। শৈলর বিয়ে হয়েছিল যশোর জেলার একটা পাড়াগাঁয়ে। শৈল কখনো সে গ্রামে যায়নি, তার স্বামী তাকে নিয়ে কলকাতায় বাসা ক’রে থাকত। তার স্বামী প্রথমে পাটের দালালি করত, তারপর একটা অফিসে ইদানীং কি চাকরি করত। যেখানে শৈলর স্বামী বাসা করেছিল তার পাশেই আমার মামার বাড়ী,—একটা গলির এপার ওপার। এই বাসায় ওরা শৈলর বিয়ের অনেক আগে থেকেই ছিল এবং শৈলর বিয়েও মামার বাড়ী থেকেই হয়। সেদিন সন্ধ্যার কিছু আগে বাগানের ম্যানেজারের বাংলো থেকে একটা ঘা ড্রেস ক’রে ফিরছি, পিওন খানকতক চিঠি আমার হাতে দিয়ে গেল। আমার বাসায় ফিরে এসে তারই একখানাতে শৈলর মৃত্যুসংবাদ পেলুম। বাংলোর চারি পাশের ঝাউ কৃষ্ণচূড়া ও সরল গাছগুলো সন্ধ্যার বাতাসে সন সন করছিল। আমার চোখের সামনে সমস্ত চা-বাগানটা, দূরের ঢালু পাহাড়ের গা-টা, মারঘেরিটা, ২নং বাগানের ম্যানেজারের বাংলোর সাদা রংটা, দেখতে দেখতে সবগুলো মিলে একটা জমাট অন্ধকার পাকিয়ে তুলল।