‘ও মা এখনো দাঁড়িয়ে আছিস!’ এর পরও মিলি দাঁড়িয়ে রইলো। জানলা বন্ধ করার জন্যে অনেকক্ষণ থেকে তার ডান হাত জানলার বাঁদিকের পাল্লায় রাখা, আরেকটা হাত জানলার শিকে। দুটো হাতই ভিজে যাচ্ছে, পানির ঝাপ্টা এসে পড়ছে চুলে ও মুখে। সামনের রাস্তা, রাস্তার ওপাশে ল্যাম্পোস্ট ও তার পাশে ঝাপ-ফেলা পানের দোকান এবং গলির নালা ও পানির মিলিত গন্ধ এই কড়া, এই হালকা। স্পষ্ট শোনা যায় কেবল আব্বাস পাগলার ধমক। আকাশের দিকে তাকিয়ে আব্বাস পাগলা একনাগাড়ে চিৎকার করে, তার চিৎকার তেপান্তরের মাঠে ঝিঝি পোকার একটানা আওয়াজের সঙ্গতে ডাকাতের হাতে-পড়া পথিকের আর্তনাদের মতো কড়াৎ করে বাজে। মিলির মা মনোয়ারা হ্যাঁচকা টানে জানলা বন্ধ করে। জানলার পাশে বিছানায় বালিশ ভিজে গেছে, বালিশের অড় খুলে মনোয়ারা মশারি টাঙাবার দড়িতে ঝুলিয়ে দেয়। জানলার তাকে বি. এস. সি. ক্লাসের কেমিস্ট্রি বইয়ের ধুলোপড়া মলাটে পানির থ্যাতলানো ফোঁটা। হাল্কা নীল রঙের শাড়ির আঁচল দিয়ে বই মুছতে মুছতে মনোয়ারা বলে, ‘কখন থেকে বলছি জানলা বন্ধ কর, জানলা বন্ধ কর! রানা আসুক, মজাটা বুঝবি!’ মিলি খুব মনোযোগ দিয়ে আব্বাস পাগলার একটানা ধ্বনিকে শব্দে ভাগ করার চেষ্টা করে। রানাকে তার ভয় পাবার কিছু নাই, এইসব ফিজিক্স কেমিস্ট্রির জন্যে রানার বয়েই গেলো!