প্রাথমিক অংশ

অনেকক্ষণ ধরে কড়া নাড়ার পর ওপরতলা থেকে জবাব আসে, ‘আসি!’ তারপর আবার কোনো সাড়া-শব্দ নেই; গেটের ওপর মাধবীলতার ঝাড়ে চরে বেড়ায় পোকামাকড়, তাদের চলাচলের ধ্বনি ছাড়া এ বাড়ির কোনো স্পন্দন বোঝা যায় না। মাধবীলতায় ঢাকা উঁচু গেট তেমন চওড়া নয়। গেটের একটা কপাট কেটে আরেকটা ছোটো দরজা। কাঠের সঙ্গে পেরেক মেরে বড়ো গেটটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অন্তত ২২/২৩ বছর থেকে এরকম বন্ধ। সুতরাং এই বাড়িতে আসতে হলে মাথা নিচু করে ছোটো দরজা দিয়ে না ঢুকে উপায় নেই। ভেতরে ৪/৫ গজ জায়গা পাকা, পাকার ফাটলে রক্তহীন ঘাসের কদমছাঁট চাপড়া। এরপর উঁচু বারান্দা, বারান্দায় মোটাসোটা সব থাম। কখনো কখনো রাত করে বাড়ি ফিরে অমৃতলাল আদর করে জড়িয়ে ধরলে থামগুলো তার হাতের বেড়ে সবটা আসে না। সেই সব থামের ওপর দোতলা, দোতলার রেলিঙঘেরা ছাদ, ছাদের একপাশে চিলেকোঠা–নড়বড় করতে করতে শ’খানেক বছর দিব্যি কাটিয়ে দিলো। ভেতরে প্রাচীরের শ্যাওলায় ও প্রাচীর সংলগ্ন শূন্যতায় তেতো-সোঁদা গন্ধ। মাধবীলতার ফিকে সুবাসের সঙ্গে কাঁঠালিচাঁপা ফুলের ঘন গন্ধ জীবজন্তুর করোটিতে হঠাৎ করে ঢুকে মগজের সাজগোজ এলোমেলো করে দেয়। মাধবীলতা তো গেটের ওপর দ্যাখাই যাচ্ছে। কাঁঠালিচাঁপার ঝাড়টা কোথায়?