বাড়িটা কেমন হয়ে গেছে আজ। কেমন একটা বিষণ্ণতা, চাপা অস্বস্তি ঘিরে রয়েছে সারা বাড়ি। শুধু এই বাড়িটি। আর সব অস্বস্তিটুকু এসে যেন জমেছে সুমিতার মনে। ওরই পায়ে পায়ে অস্বস্তির ছায়া ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে পড়ার ঘর থেকে শোবার ঘরে। বাবার ঘর থেকে বড়দির ঘরে। বড়দির ঘর থেকে ওর আর ওর মেজদির ঘরে। উত্তরের বারান্দা পার হয়ে খাবার এবং পাশে রান্না ঘর। সবখানে কীসের একটা ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেখানে যায় সুমিতা, সেখানেই। যেন ওরই পায়ে পায়ে ফিরছে। শুধু অস্বস্তি নয়, অশান্তিও। তার সঙ্গে কেমন একটু বুক চাপা ব্যথা ভার হয়ে চেপে আছে সর্বত্র। রান্নাঘরের পাশ দিয়ে ছোট সিঁড়ি নেমে গেছে বাগানের মধ্যে। ছোট বাগান। সামান্য কিছু ফুলগাছ। একটি কিশোরী স্বর্ণচাঁপা গাছ আছে এক কোণ ঘেঁষে। আর নিতান্ত শখ করে লাগানো কিছু শীতের আনাজ। সযত্ন হাতের ছোঁয়ায় এ সামান্যই কেমন অসামান্য হয়ে উঠেছে সবুজের সমারোহে। আজ সেখানেও সেই বিষণ্ণতা। এই শেষ শীতের দিনেও গুটি কয়েক মাঘের ফুলকপি, হাতে গোনা দুটি বাঁধাকপি। রূপ আছে যদিও, গন্ধহীন কিছু মরশুমি ফুলের গাছ। ফুটনোন্মুখ দুটি ডালিয়া আর কেমন একরকমের গাঢ় লালে হঠাৎ কালোর ছোঁয়ায় চাপা ব্যথার রং লেগেছে কিছু ফোঁটা কারনেশনে। কিছু আছে ক্রিসানথিমাম। স্বর্ণচাঁপার সুদীর্ঘ কাঁচা-সবুজ রং পাতার ঝাড়। পুবে-পশ্চিমে ছড়ানো এ ফালি বাগানের অসংখ্য উন্মুক্ত চোখের মতো পাতাগুলি। সবখানেই তার বিন্দু বিন্দু শিশিরে অশ্রু বিষণ্ণতা, জমাট হয়ে আছে নিঃশব্দ কান্না। ফাঁকে ফাঁকে মাকড়সার জালগুলিতে আলোর ছোঁয়ায় রং লাগেনি এখনও।