সমস্ত ঘটনাটা ঘটে গেল চোখের নিমেষে। অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মতো। শংকর বসেছিল হাইওয়ের চণ্ডীতলার মোড়ে, বটতলা ঘেঁষে, দুলালের চায়ের দোকানের বাইরের বেঞ্চিতে। রোজই বিকালে, সূর্যাস্তের আগে সে এখানে এসে বসে, চা খায়, এবং গ্রামের অন্যান্যরা যখন দোকানের ভিতরে বাইরে নানা কথা নিয়ে আসর সরগরম করে তোলে, সে বেঞ্চির এক পাশটিতে বসে, পশ্চিমের দিগন্তবিসারী মাঠের শেষে, দিকচক্রবালের দিকে তাকিয়ে সূর্যাস্ত দেখে। এই সময়টা সে সব ভুলে যায়। কলকাতার কথা, এই দূর গ্রাম-বাসের কথা, প্রতি দিনের নানা ঘটনা, নিজের কাজকর্ম, যা নিয়ে দিনে রাত্রে নানা আলোড়ন সৃষ্টি করে, কোনও কথাই এ সময়ে মনে থাকে না। এমন দিগন্তব্যাপী মাঠ, যা আকাশের গায়ে গিয়ে মিশেছে, এবং যেখানে সূর্য ক্রমে ক্রমে একটি বিশাল লাল টকটকে গোলকের মতে, যেন দিগন্তের ভূমিশয্যার পিছনে আস্তে আস্তে ডুবে যেতে থাকে। আকাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে রক্তের ছটা, আর পাখিরা সেই ছটার রং ডানায় মেখে, জোড়ায়, কঁক বেঁধে অথবা একা নানা দিকে উড়ে যেতে থাকে, শংকর যেন স্পষ্ট বুঝতে পারে, পৃথিবী ক্রমাগত ঘুরে চলেছে। মনে হয়, পৃথিবীর আর কোথাও বসে এমন একটি মহিমময় দৃশ্য দেখা যাবে না। এই সময়টিতে ওর এই আটত্রিশ বছর বয়সের জীবনের যত সুখ-দুঃখ, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, জট-জটিলতার অতীত, এক অনির্বচনীয়তায় ভরে ওঠে।