Cover image of পাকিস্তান প্রস্তাব ও ফজলুল হক

পাকিস্তান প্রস্তাব ও ফজলুল হক

অমলেন্দু দে
রাজনীতি

প্রাথমিক অংশ

১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে আবুল কাশেম ফজলুল হক বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য হন। তখন থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তারপর থেকে একটানা ভারত বিভাগের সময় পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের আইনসভার সদস্য ছিলেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের ঢাকা বিভাগীয় কেন্দ্রের শূন্যপদে উপনির্বাচনে ফজলুল হকের সঙ্গে রায়বাহাদুর কুমার মহেন্দ্রনাথ মিত্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। এই নির্বাচন কেন্দ্রের বেশির ভাগ ভোটারই ছিলেন হিন্দু। তখন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার ছিল না। খাজনা ও সেস প্রদানের সামর্থ্য যাঁদের ছিল তাঁরাই ছিলেন ভোটার। বঙ্গ-ভঙ্গ রহিত হবার পরে হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কে যথেষ্ট তিক্ততা ছিল। তাই অন্য কোনো মুসলমান নেতা বর্ণ-হিন্দুদের প্রাধান্য আছে এমন একটি কেন্দ্রে নির্বাচন প্রার্থী হতে সাহসী হননি। ফজলুল হক এই নির্বাচন সংগ্রামে অবতীর্ণ হন।১ স্বদেশি যুগের প্রখ্যাত নেতা অশ্বিনী কুমার দত্ত তাঁকে সমর্থন করেন। ফজলুল হকের পিতা মৌলবী মহম্মদ ওয়াজেদকে অশ্বিনী কুমার দত্ত খুবই শ্রদ্ধা করতেন এবং ফজলুল হককে তিনি পুত্রতুল্য স্নেহ করতেন। তাই অশ্বিনী কুমার দত্তের স্নেহধন্য ফজলুল হকের পক্ষে এক জটিল সাম্প্রদায়িক পরিবেশের মধ্যেও অগ্রসর হওয়া কষ্টকর হয়নি।২ ফজলুল হকের অসাধারণ বাগ্মিতা ও আন্তরিকতায় নির্বাচকমণ্ডলী স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়। তিনি যেসব ভাষণ দেন তাতে একটি পরিচ্ছন্ন বাঙালি মনের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি ঘোষণা করেন, তিনি বাঙালির উন্নতি ও কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করবেন। বাঙালির সম্মান ও আত্মমর্যাদার কথা বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরায় গোটা নির্বাচনী পরিবেশ তাঁর অনুকূলে যায়। তাই মুসলমান হয়েও বর্ণ-হিন্দুদের ভোটে বর্ণ-হিন্দু প্রার্থীকে তিনি পরাজিত করতে সক্ষম হন। এইভাবেই বাঙালি ফজলুল হকের রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে।