রাত্রে ঘুমের মধ্যে একবার যেন মনে হয়েছিল কীসব কথাবার্তা চলাফেরার শব্দ শোনা যাচ্ছে; কিন্তু শান্টুর ঘুম যা গাঢ়। ওই মনে হওয়াটাই মাত্র। চেতনার কিনারায় একবার ভুস করে মাথা তুলেই আবার সে তলিয়ে গিয়েছিল ঘুমের গহিনে। শান্টুর মা বলেন, ঘরে গরুমোষ জবাই করে ফেললেও শান্টু টের পাবে না। শান্টুর এতে ভয়ানক আপত্তি। একটা গরু বা মোষকে পাঁচ-সাতজন লোক মাটিতে পেড়ে ফেলার সময় যে-রকম ধুন্ধুমার শব্দ ওঠে, তাতেও ঘুম ভাঙবে না, এমন বিচ্ছিরি রকমের ঘুম শান্টুর নয়। কিন্তু কে শোনে তার আপত্তি। মা কথাটা বলামাত্র আর সবাই তাতে এমন মজা পেয়ে যায় আর এতবার করে সবাই সেটার পুনরুক্তি করে যে, কথাটা এখন বাড়িতে প্রবাদ-কথার মতো হয়ে গেছে। কিন্তু কাল রাত্রে কখনই ও-রকম গরুমোষ জবাই করার মতো হৈ-হল্লা হয়নি। কারণ শান্টুর ঘুম যখন পাতলা হয়ে এসেছিল, সে কারো কোনো উচ্চকণ্ঠ, হাঁকহাক শোনেনি। দরজার শিকল ধরে ঝনঝন করার শব্দের সঙ্গে ফিসফিস কণ্ঠে কথা, লণ্ঠনের ফিতে উস্কে দরজা খুলে উঠোনে নামা, আবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করা, কাউকে ফিসফিস করে কিছু বলা, তারপর লণ্ঠনের বাতি কমে যাওয়া— এর বেশি কিছু হয়নি। তাই তার ঘুমটাও পুরোপুরি ভাঙবার অবকাশ পায়নি। এখন সকালে চোখ মেলতেই সব মনে পড়ে গেল এবং সে বিদ্যুৎবেগে বিছানার ওপর উঠে বসে ঘরের চারদিকে তাকাল।