প্রাথমিক অংশ

১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। যশোর জেলার একটি গ্রাম, নাম—গোয়ালহাটি। এই গ্রামের একপ্রান্তে বড়বড় গাছপালা-ঘেরা একটা জায়গায় সেদিন ঘটেছিল প্রাণস্পর্শী এক ঘটনা, পরবর্তী কালে যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়রূপে চিহ্নিত হয়ে আছে। সেদিন, ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, গোয়ালহাটির সেই বড়বড় গাছপালা-ঘেরা জায়গাটিতে উপস্থিত ছিলেন তিনজন সৈনিক। দুজন গুরুতর আহত, মাটিতে পড়ে রয়েছেন। একজনের গায়ে গুলি লেগেছে, আঘাত তত গুরুতর নয়। অন্যজনের হাঁটু ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে, ডান কাঁধ দিয়ে প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে। তিনি একটা গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে আছেন, হাতে লাইটমেশিনগান। তৃতীয় সৈনিকটি অক্ষত, দাঁড়িয়েই আছেন বটে, তবে তাঁর মুখে ক্লেশ ও উদ্বেগের ছাপ। চারপাশ দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি। লক্ষ্য এঁরা তিনজন। হাঁটুভাঙা সৈনিকটি একবার বাঁ দিকে নল ঘুরিয়ে ঠাঠা ঠাঠা করে এলএমজির গুলি ছুড়লেন খানিকক্ষণ, তারপর দাঁড়ানো সৈনিকটির দিকে তাকিয়ে কড়াস্বরে বললেন, ‘এখনো হা করে দাঁড়িয়ে আছ মোস্তফা? শিগগির নানুমিয়াকে কাঁধে তুলে নাও। তাড়াতাড়ি যাও প্রতিরক্ষা-ঘাঁটিতে। আমি ততক্ষণ কাভার দিই।