আজ সারাটা দিন সূর্যদেব উঠলেন না। কাঠ-কয়লার মত মেঘ ভুটান পাহাড় থেকে নেমে সারা আকাশ জুড়ে অনড় হয়ে রয়েছে সেই শেষরাত থেকে। সারাটা দিন কেটে গেল গভীর আলস্য নিয়ে। শেষ বিকেলে বাতাস রইল; কাছাকাছি কোথাও বৃষ্টি হয়ে গেছে এমন আমেজ ছিল সেই বাতাসে। একটু শীতেল হয়ে উঠল। চারপাশ। চকোলেট মিলিয়ে যাওয়ার পরও জিভে যেমন তুলতুলে অনুভূতি ছড়ানো থাকে তেমনি এক আলো এখন মাঠের ওপরে, দেওদার গাছের মাথায়, কোয়াটার্সগুলোর টিনের চালের চুড়োয় চুড়োয় নেতিয়ে রযেছে। মুখ তুলে আকাশ দেখলে মনে হয় মেঘেরা বুঝি হওয়ার ধকল সইতে না পেরে এক ছুটে নেমে এল; কিন্তু আজ বৃষ্টি হবে না। মেঘগুলো এই হঠাৎ নামা শীতের দাঁত সইতে না পেরে কুঁকড়ে যাবে। এইভাবেই দু-তিনদিন সইবার পর জল ঝরবে। চা-বাগানের ওপর, কোয়াটার্স, মাঠ, আসাম রোড ভিজবে তেমাথা বুড়ির মত অসাড়ে। এবং সেই পর্ব শেষ হলেই শীত নামবে জাঁকিয়ে। আজকের মেঘ যেন বুধুয়ার তরকারি কোটা, রান্নাঘরে মায়ের উনুনে কড়াই চাপানোর অনেক দেরি। মাঠের মাঝখানে চাঁপা ফুলের গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সিরসিরে হাওয়ায় একটু কেঁপে উঠে দীপা চিৎকার করল, তাড়াতাড়ি কর, আমার শীত করছে। ওপর থেকে কোন উত্তর এল না।